সাবজেক্ট রিভিউ : Naval Architecture & Offshore Engineering (NAOE)
বাংলাদেশের একমাত্র মেরিটাইম রিলেটেড বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়।এখানে বর্তমানে চারটি ফ্যাকাল্টির অধীনে পাঁচটি ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড অফশোর ইঞ্জিনিয়ারং সাবজেক্টটি নিয়ে।
আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য মানে আমরা কমবেশি সবাই বুঝি।হয়তো আজকের যে দালান বা যেকোনো শিল্প তৈরি হচ্ছে তা সবই স্থাপত্যের অবদান। কিন্তু নেভাল আর্কিটেকচার বা নৌ স্থাপত্য টা কী? নেভাল আর্কিটেকচার বা নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৌশলবিদ্যার এমন এক শাখা যেখানে আলোচনা করা হয় বিভিন্ন ধরনের নৌযানের স্থাপত্য, শিল্প, অবকাঠামো তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে।
৭টি পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট, ডেইলি শর্ট কুইজ, সাজেশন এবং সকল ধরনের সহযোগিতা পেতে এডমিশন রিলেটেড আজই এনরোল করো BSMRMU এর FET, FEOS, FSA, FMGP মডেল টেস্ট প্রোগ্রামে:
সহজ বাংলায় আমাদের চোখে দৃশ্যমান ডিঙি নৌকা থেকে শুরু করে রণতরী এই floating object গুলোকে তৈরি থেকে পানিতে ঠিকঠাক ভাবে ভাসমান রাখার কাজই করা নৌ স্থাপত্যবিদ্যায়। নেভাল আর্কিটেক্টরা একটি vessel এর ডিজাইন থেকে শুরু করে এর নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, তদারকি ইত্যাদি সবকিছুই করে থাকেন। একটি অত্যাধুনিক যাত্রী জাহাজ থেকে শুরু করে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার সবই এই নেভাল আর্কিটেক্টদের হাতের নিচ দিয়ে যায়। আর কিছু কি লাগে?
এখন আসি অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং এর অংশে। বাংলাদেশে এই নাম খুবই নতুন এবং তা বর্তমানে শুধুমাত্র আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ানো হয় ধরো সমুদ্রে তলদেশে কোনো এক জায়গায় জরিপ করে মূল্যবান তেল-গ্যাস এর সন্ধান পেলে। এখন তোমার প্রয়োজন এগুলোকে ভূমিতে উঠিয়ে আনা। কী করবে? ভেবে দেখো কত কঠিন কাজ, একদিকে পানির নিচে তাঁর উপর কত প্রতিকূল পরিবেশ সমুদ্রে। কিন্তু একজন অফশোর ইঞ্জিনিয়ারের জন্য এটা কোনো সমস্যাই নয়। অর্থ্যাৎ সহজ বাংলায় অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূলনীতিই হচ্ছে সমুদ্রে কোনো শক্তিশালী স্ট্রাকচার তৈরি করে সেটার মাধ্যমে মূল্যবান খনিজ পানির উপরে উঠিয়ে আনা এবং সে সম্পর্কিত গবেষণা অভিযান চালানো।
যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হবে:
ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং আইসিটি।
পরীক্ষার পদ্ধতি- নৈর্ব্যক্তিক এবং সংক্ষিপ্ত রচনামূলক ।
সময়- ৯০ মিনিট এবং পূর্ণমান- ১০০ ।
* নেভাল আর্কিটেকচার এবং অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তুমি কী হবে?
– একবার চিন্তা করে দেখেছ এখানে কিন্তু তোমার একইসাথে একজন আর্কিটেক্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার দুটো হবারই সুযোগ।
থাকছে! তুমি হতে পারো
Naval Architect
Offshore Engineer
Drilling Engineer
Marine Engineer
Subsea Engineer
Production Engineer
Structural Engineer
Maintainance Engineer
Project Manager সহ আরো অনেক কিছু যা নির্ভর করে তোমার স্কিলের উপর। এই সাবজেক্টে পড়ানোই হয় এমনভাবে যাতে তুমি একজন দক্ষ নৌ প্রকৌশলী হওয়ার পাশাপাশি হতে পারো দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার।
* দেশে কি জব আছে?
–
দেশে জবের মার্কেট সার্বিকভাবে কেমন আমরা সবাই ভালোভাবে জানি। কিন্তু একটা কথা সত্য যে নিজেকে যেভাবে তুমি গড়ে তুলবা, নিজের স্কিলকে যত দক্ষভাবে কাজে লাগাবা তোমার জন্য জবের অভাব হবেনা। আমরা জানি বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের পর দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটবে “ব্লু ইকোনমি” তে। এজন্য মেরিটাইম সেক্টরে প্রচুর জনশক্তি দরকার যার পরিকল্পনা করেই এই মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র জয়ের পর আমরা বিশাল একটি অংশ পেয়েছি যাতে ধারণা করা হয় প্রচুর খনিজ শায়িত আছে কিন্তু দক্ষ জনশক্তি ও মেধার অভাবে আমরা এগুলো সঠিক ব্যবহার করতে পারছিনা। এজন্যই এখন বাংলাদেশে অফশোর ইঞ্জিনিয়ারের খুব খুব চাহিদা। আমরাই দ্বার খুলব এই সম্ভাবনায় ভরা ক্ষেত্রের। আবার হয়ত তোমরা শুনেছ বাংলাদেশ জাহাজ তৈরি করে রপ্তানি করতে শুরু করেছে। একটি বিশ্বমানের আধুনিক জাহাজ তৈরির জন্য অবশ্যই প্রয়োজন একজন দক্ষ নেভাল আর্কিটেক্টকে। দেশের শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোর এখন এই লক্ষ্যে প্রচুর পরিমাণ দক্ষ আর্কিটেক্ট দরকার যারা বিশ্বের বাজারে আমাদের তৈরি করা জাহাজ তুলে ধরবে। তাঁর উপর বলে রাখি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা কারণ এর তত্ত্বাবধনে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। যেহেতু তুমি একজন নৌ স্থপতি হবে সেহেতু অবশ্যই নৌবাহিনী থেকে একটা গুরুত্ব পাবে যেটা আমাদের জন্য অতিরিক্ত প্রিভিলিজ। তাছাড়াও যদি মনে কর না তোমার ভাল্লাগছেনা। তুমি অফশোর ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওনা। সমস্যা নেই, অনার্স কমপ্লিট করার পর মাস্টার্সে খুব সহজেই অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন তথা এরোনটিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিকাল ইইঞ্জিনিয়ারিং, পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিগ্রি নিতে পারবে এবং নিজের বহুমুখী প্রতিভা দ্বারা বিভিন্ন জায়গায় হাই প্রোফাইল জব নিয়ে নিতে পারবে। যদি এখন বিদেশের কথা চিন্তা করো তবে বলব একজন রেগুলার নেভাল আর্কিটেক্ট বা অফশোর ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বছরে 1,20,00$। কাজেই বুঝতে পারছ যে তোমার চাকুরির অভাব নেই, শুধু নিজেকে সেভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে। তাহলে যেকোনো কিছুতেই নিজের জ্ঞান ব্যবহার করে সিদ্ধিলাভ করতে পারবে৷ নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং এরমক্ষেত্র কতটা বিস্তৃত ভালো করেই বুঝতে পারছ!
* কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি?
প্রথমত এটি একটি বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের প্রথম। মেরিটাইম সেক্টরের উন্নতির জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। আগেই বলেছি এখানে বাংলাদেশ নেভীর অফিসার, শিক্ষকরা তদারকি করে থাকেন। বুঝাই যাচ্ছে আমাদের যে শিক্ষাটা দেয়া হবে সেটা কতটা স্বচ্ছ এবং পরিপূর্ণ। তাই যদি এখানে চান্স পেয়ে এই সাবজেক্টটি পাও তবে সেটা তোমার জন্য আশির্বাদ। এখন তুমি কী করবে না করবে সেটা তোমার ব্যাপার।
* নেভাল আর্কিটেক্টদের জীবনে কি কোনো আনন্দ আছে?
–
এই সাবজেক্ট পৃথিবীর সে সকল সাবজেক্টগুলোর মধ্যে একটা যাতে এডভেঞ্চার আর রোমাঞ্চের কোনো শেষ নেই। ৪ বছরের কোর্সে নিয়মিত ফিল্ড ট্রিপ থেকে শুরু করে জাহাজে অবস্থান করা সবকিছুই করা হয়ে যাবে তোমার। আর বাদ বাকী ভবিষ্যৎ বলে দিবে!
Written by- Sheikh Tawsif Samin
9 Comments